জাহিলিয়্যাতের রসমের বর্ণনা
নিম্নলিখিত কাজগুলো জাহিলী বদরসম। এ থেকে দূরে থাকা কর্তব্যঃ
১. ছেলেমেয়েদেরকে কুরআন ও ইলমে দ্বীন শিক্ষা না দিয়ে মূর্খ বানিয়ে রাখা বা কু-শিক্ষায়, কু-সংসর্গে লিপ্ত হতে সহায়তা করা।
২. বিধবা বিবাহকে দূষণীয় মনে করা।
৩. বিবাহের সময় সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও সমস্ত দেশাচার-রসম পালন করা।
৪. বিবাহে নাচ-গান করানো।
৫. হিন্দুদের উৎসবে যোগদান করা।
৬. আসসালামু আলাইকুম না বলে আদাব নমষ্কার বলা।
৭. মুরুব্বিকে আসসালামু আলাইকুম বললে বেআদবি মনে করা।
৮. মেয়েলোকদের দেবর, ভাসুর, মামাত, ফুফাত, খালাত, চাচাত ভাইদের বা ভগ্নীপতি, বেয়াই, নন্দাই ইত্যাদির সঙ্গে হাসি-মশকরা করা বা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা কিংবা পথে-ঘাটে বেড়ানো।
৯. গান-বাদ্য শোনা।
১০. জারি যাত্রা, সংকীর্তন, গাজীর গীত, থিয়েটার, বায়স্কোপ, রেসকোর্স ইত্যাদিতে যোগদান করা।
১১. সারঙ্গ, বেহালা, হারমোনিয়াম, গ্রামোফোন ইত্যাদি বাজানো বা শোনা।
১২. গান-গীত গাওয়া, বিশেষত খাজাবাবার উরসের নামে গান করা বা শোনাকে সওয়াবের কাজ মনে করা।
১৩. নসব বা বংশের গৌরব করা।
১৪. কোন বুযুর্গের বংশধর বা মুরীদ হলে, তিনিই পার করে দিবেন-এরূপ মনে করে নিজের আমল-আখলাক দুরুস্ত না করে বসে থাকা।
১৫. কারো জাত-বংশ বা নসবে কোন দোষ-ত্রুটি থাকলে তা খুঁজে বের করা এবং তা নিয়ে খোটা দেওয়া, গীবত করা।
১৬. ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করা।
১৭. কোন হালাল পেশাকে অপমানের বিষয় মনে করা। যেমন, দপ্তরির কাজ করা, মাঝিগিরি বা দর্জিগিরি করা, মাছ বিক্রি করা, তেল বা নুনের দোকান করা, মজুরি করে পয়সা উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা ইত্যাদি পেশাকে খারাপ মনে করা।
১৮. আসসালামু আলাইকুম বলাকে বেআদবি মনে করা বা বললে উত্তর দিতে লজ্জাবোধ করা।
১৯. চিঠিতে কাউকে পরমেশ্বর, পরম পূজনীয় লেখা।
২০. নামের আগে ‘শ্রী’ লেখা বা আল্লাহর নাম না লিখে চিঠির উপরিভাগে ‘হাবীব সহায়’ লেখা।
২১. সাক্ষাতে কারো তারিফ করা বা শরী‘আতের সীমালঙ্ঘন করে বড়লোকের প্রশংসা করা।
২২. বিবাহ-শাদীতে অযথা অপচয় ও অপব্যয় করা এবং হিন্দুদের রসম পালন করা; যেমন, ফুল, কুলা দ্বারা বৌ বরণ করে নেওয়া।
২৩. ঢাকুন পাড়িয়ে যাওয়া।
২৪. ভরা মজলিসে বৌ-এর মুখ দেখানো।
২৫. গীত গেয়ে স্ত্রী পুরুষ একত্রিত হয়ে বর-কনেকে গোসল দেয়া।
২৬. পণ দাবি করা; [হ্যাঁ, মেয়ের বিবাহে বংশ অনুসারে মহর ধার্য করে তা শর্ত অনুযায়ী উসূল করা জায়িয, কিন্তু তা মেয়ের পাওনা, বাপ-ভাইয়ের নয়।]
২৭. বিবাহের সময় জোর-জবরদস্তি করে দাওয়াত গ্রহণ করা, বা দাওয়াত না দিলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা।
২৮. মাতুলের টাকা বা খাতিরে টাকা লওয়া।
২৯. নওশাকে [দুলহাকে] শরী‘আতের খেলাফ লেবাস-পোশাক পরানো।
৩০. পুরুষদের জন্যে সোনার আংটি পরা বা পরানো।
৩১. পুরুষদের জন্যে হাতে পায়ে বা নখে মেহেদি লাগানো। [কিন্তু মেয়েলোকের জন্যে মেহেদি লাগানো মুস্তাহাব।]
৩২. আতশবাজী করা। ৩৩. বিবাহে কাগজ কেটে বা কলাগাছ গেড়ে মাহফিল সাজানো।
৩৪. মাহরাম-গায়রে মাহরাম ভেদাভেদ না করে মেয়েলোকদের মধ্যে জামাই বা অন্য লোক যাওয়া এবং মেয়েলোকদের গীত গাওয়া।
৩৫. কেউ মরে গেলে চিৎকার করে, মুখ বুক পিটিয়ে বা মৃত ব্যক্তির গুণাবলী বর্ণনা করে ক্রন্দন করা।
৩৬. মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়কে দূষণীয় বা খারাপ মনে করা।
৩৭. বেশি সাজসজ্জা, ফ্যাশন বা বাবুগিরিতে লিপ্ত হওয়া।
৩৮. সাদাসিধা বেশ-ভূষাকে ঘৃণা করা, লম্বা ঢিলা পিরহান, টাখনুর উপরে পায়জামা পরা ও টুপি পরাকে অবজ্ঞা করা, বিশেষত: এসব দেখে উপহাস করা।
৩৯. তসবির ও ছবি লটকিয়ে ঘরের বা কামরার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
৪০. পুরুষের রেশমী লেবাস পরা, সোনার আংটি, সোনার চেইন, সোনার ঘড়ি বা সোনার ফ্রেমের চশমা ইত্যাদি ব্যবহার করা।
৪১. পাতলা কাপড়, ধুতি, হাফপ্যান্ট বা প্যান্ট বা হ্যাট কোট পরা।
৪২. মেয়েদের বাজনাওয়ালা যেওর ব্যবহার করা।
৪৩. কাফিরদের অর্থাৎ হিন্দু বা ইংরেজদের বেশ-ভূষা, ফ্যাশন অবলম্বন করা।
৪৪. হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে বা কোন পীরের দরগায় যে মেলা বসে, তাতে যোগদান করা।
৪৫. বেটা ছেলেদের যেওর পরানো।
৪৬. দাড়ি এক মুঠি থেকে কামানো, ছাটানো বা উপড়ানো।
৪৭. মোচ বাড়ানো, এলফেট রাখা।
৪৮. টাখনুর নিচ পর্যন্ত পায়জামা বা লুঙ্গি পরা।
৪৯. পুরুষ হয়ে স্ত্রীলোকের বা স্ত্রী হয়ে পুরুষের বেশ ধারণা করা।
৫০. শুধু সৌন্দর্যের জন্যে বা ফ্যাশনের জন্যে কামরার ছাদে বা দেয়ালে চাঁদোয়া লটকিয়ে রাখা।
৫১. কালো খেযাব লাগানো।
৫২. কোন জীবকে বা জিনিসকে অশুভ মনে করা। যেমন, পেঁচা ঘরে ঢুকলে ঘর উজাড় হয়ে যাবে, বাটখারায় পা লাগলে কারবারে বরকত থাকবে না, তিল হাড়ি মাটিতে স্পর্শ করলে তিলে বিছা লাগবে, ধান বুনে খৈ ভাজলে ধান জ্বলে যাবে, জাল ডিঙ্গালে জালে মাছ পড়বে না ইত্যাদি অলীক ধারণা পোষণ করা।
৫৩. হিন্দু শাস্ত্র মতে একটি রাত এমন শর্ত অনুযায়ী উসূল করা জায়িয রয়েছে, যাতে চুরি করলে পাপ নেই। সেই রাতে মুসলমানদের সেরূপ করা।
৫৪. শরীরে সূঁচের দ্বারা খোদাই করে ব্যাঘ্র বা নিজ মূর্তি কিংবা অন্য কোন ছবি অঙ্কন করা।
৫৫. পাকা চুল বা দাড়ি উপড়িয়ে ফেলা।
৫৬. শাহওয়াতের সাথে কারো সঙ্গে কোলাকুলি-গলাগলি করা বা হাত মিলানো।
৫৭. শতরঞ্জ, তাস, পাশা, কড়ি ইত্যাদি খেলায় লিপ্ত হওয়া।
৫৮. টিভি, সিনেমা, বায়স্কোপ ও থিয়েটার দেখা।
৫৯. যাত্রা, জারি, মারফতি ইত্যাদি গান শোনা।
৬০. সার্কাস দেখা।
৬১. খরিদদারের সঙ্গে ধোঁকাবাজী করা বা মাল দেখে, সে মাল ক্রয় না করলে তাকে মন্দ বলা।
৬২. শরী‘আতের খেলাফ ঝাড়-ফুঁক বা তাবিয-তুমার করা।
৬৩. অনুমান করে শরী‘আতের মাসআলা বাতানো।
৬৪. হিন্দুদের নিকট থেকে তাবিয বা পানি-সূতা পড়িয়ে নেওয়া।
৬৫. দোকান শুরু করতে, নৌকা খুলতে বা জাল ফেলতে নেবা দেওয়া বা নৌকার গলুয়ে পানির ছিটা দেওয়া ইত্যাদি।
মূর্খতাবশত সমাজে এরূপ আরো অনেক কুসংস্কারের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করে সেসবও পরিত্যাগ করা একান্ত আবশ্যক।
Comments
Post a Comment